স্বদেশ ডেস্ক:
শীতকালে কিছু ঝামেলাহীন ব্যায়াম বাড়িয়ে দিতে পারে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফিজিক্যালি ফিট থাকতে আমরা কিছু সঠিক উপায় মেনে চলি। বয়স বেশি হলে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার রক্তে কলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, দীর্ঘদিন হাঁটতে না পারলে বা ব্যায়াম করতে না পারলে সমস্যা আরও বাড়ে। কাজেই শুয়ে-বসে না থেকে দিনভর সচল থাকতে হবে। বাড়াতে হবে ব্যায়ামের পরিমাণও।
যে ধরনের ব্যায়াম করবেন : ব্যায়াম বলতে কেউ হয়তো নিয়মিত একটু জোর কদমে ছাদে হাঁটেন বা ট্রেডমিলে, আবার কেউ করেন যোগাসন। কিন্তু তাতে পুরো কাজ হয় না। তাই কী করলে শরীরের প্রয়োজনীয় ওয়ার্কআউট হয়, তা জানতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন থেকে জানানো হয়েছে, ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়স্ক সুস্থ ও শারীরিকভাবে ফিট মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি গতিতে বা ৭৫ মিনিট জোর গতিতে শারীরিক ব্যায়াম করা দরকার। নিয়ম করে সপ্তাহে ২-৩ দিন করতে হবে পেশিশক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম। শারীরিক এক্সারসাইজ বলতে হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, স্কিপিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি বোঝায়। তাই ট্রেডমিল বা ছাদে হাঁটুন, স্পট জগিং করুন, স্পট স্কিপিং করুন বা স্ট্যাটিক সাইকেল চালান। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। জোরে হাঁটলে হার্ট ও ফুসফুসের বেশি উপকার হয়। হাঁটুন টানা ২০-৩০ মিনিট। নইলে সকালে ২০ মিনিট ও বিকালে ২০ মিনিট হাঁটুন। এমন গতিতে হাঁটতে হবে, যেন হাঁপিয়ে ওঠেন। হাঁটু, কোমর, গোঁড়ালির অবস্থা দেখে নেবেন। হার্ট, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কম থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তবে হাঁটা বা জগিংয়ের আগে ভালো মানের জুতা পরে নেবেন। নইলে পা ব্যথা হতে পারে।
স্ট্রেচিং সম্পর্কে কমবেশি সবারই জানা। শরীরের প্রতিটি পেশিসন্ধি সচল রাখতে এ ব্যায়াম খুব উপকারী। পা, কোমর, শিরদাঁড়ার স্ট্রেচিং এ সময় খুব কাজে আসবে। কোনো ব্যথাবেদনা বা অস্থিসন্ধি ও পেশির বড় কোনো সমস্যা না থাকলে করতে পারেন। পেশি জোরদার বা মাসল স্ট্রেন্দেনিং করার ব্যায়াম দুভাবে করা যায়। বাড়তি ওজন নিয়ে ও শরীরের ওজন ব্যবহার করে। এর মধ্যে বিভিন্ন রকম স্কোয়াটিং আছে, তেমনই রয়েছে লেগ রাইজিং, প্ল্যাঙ্ক, পুশআপ ইত্যাদি। তবে বয়স্ক বা ক্রনিক অসুখ আছে বা শারীরিক ফিটনেস কম বা হাঁটু, কোমর ব্যথা আছে- এমন ব্যক্তির পক্ষে অভ্যাস না থাকলে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সুস্থরা অবশ্যই করতে পারেন সবগুলো ব্যায়াম।
ইদানীং কয়েক নতুন ধরনের ব্যায়ামের ধারা চালু হয়েছে, যাতে সুরের তালে-তালে অ্যারোবিক্সের সঙ্গে স্ট্রেচিং, ব্যালেন্সিং, স্ট্রেংথ ট্রেনিং সব হয়ে যায়। সেটি হলো টাবাটা। বয়স কম ও ফিটনেস থাকলে টাবাটা করা যেতে পারে। বেশি বয়সেও ফিটনেস ভালো থাকলে, হাঁটু ও কোমর ঠিক থাকলে জুম্বা করতে পারেন। জুম্বায় শরীর যেমন ভালো থাকবে, মন হালকা হবে। ইয়োগা করতে পারেন। বাসায়ই করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ইয়োগা পারদর্শী ট্রেইনারের অধীনে থেকে ইয়োগা করলে ভালো ফলাফল পাবেন। আমাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি, মানসিক সুস্থতাও জরুরি। ব্যায়ামের পাশাপাশি নিয়মিত মেডিটেশন করলে মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে পারবেন।
ব্যায়ামের উপকারিতা : শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরে যাবে। হার্ট ও ফুসফুস সতেজ থাকবে। করোনা ভাইরাসের মতো যে কোনো শারীরিক জটিলতা ঠেকাতে এর বড় ভূমিকা রয়েছে। সুগার, প্রেসার, কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে প্রথম দুটির সঙ্গে কোভিড ১৯-এর সম্পর্ক রয়েছে। হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। হাড় নরম হয়ে ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা কমে। ফিজিক্যাল ফিটনেস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
লেখক : সিনিয়র ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ